অনলাইন ডেস্কঃ
গত ২২ জুলাই শনিবার সন্ধায় শরীফপুর তালুকদার বাড়ি সংলগ্ন সড়কের পাশে বস্তাবন্দি এক লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। নিহতের নাম রাজনা বেগম।
রাজনা বেগম পাথারিয়া গ্রামের ইসরাইল মিয়ার মেয়ে এবং স্থানীয় সুরমা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের ৭ম শ্রেণির ছাত্রী।
এই ঘটনায় অজ্ঞাতনামা আসামী করে গত ২৩ জুলাই শান্তিগঞ্জ থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন রাজনা বেগমের পিতা ইসরাইল মিয়া।
এ ঘটনার ব্যাপারে জগন্নাথপুর ও শান্তিগঞ্জ থানার সার্কেল সহকারী পুলিশ সুপার শুভাশিস ধর বলেন, “রাজনা হত্যার বিষয়ে বহুমূখী তৎপরতা রয়েছে।”
স্কুল ছাত্রী রাজনা হত্যার প্রতিবাদে শান্তিগঞ্জের পাথারিয়ায় ছাত্র-শিক্ষক জনতার উদ্যোগে মানববন্ধন হয়েছে।
বুধবার (২৬ জুলাই) উপজেলার পাথারিয়া-দিরাই সড়ক অবরোধ করে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেন এলাকাবাসী ও তার সহপাঠিরা। সুরমা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের আয়োজনে প্রায় দুই ঘন্টাব্যাপী মানববন্ধন কর্মসূচিতে নিহতের স্বজন, স্কুলের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, স্থানীয় বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন ও এলাকার বিভিন্ন শ্রেণি পেশার লোকজন অংশগ্রহণ করেন।
এসময় রাজনা আক্তারের পিতা ইসরাইল মিয়া বলেন, “আমরা কয়েক জনকে সন্দেহ করছি। প্রায় ৭ জনের নাম লিখে থানার এসআই স্যারের কাছে দিয়েছি। যারার নাম দিয়েছি তারা আশেপাশে ঘুরতাছে।”
তাদের নাম সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি জানান, “এরা খুব প্রভাবশালী। একারণে আমি ডরাইয়া নাম কইতাছি না।”
দুই ঘন্টাব্যাপী মানবন্ধনে বিদ্যালয়ের শতাধিক শিক্ষার্থী অংশ নিয়েছেন। রাজনার নির্মম হত্যাকাণ্ডের পর বিদ্যালয়ে আসতেও ভয় পায় তারা। ঘটনার ৩ দিন পার হলেও এখন পর্যন্ত কাউকে আটক না করায় ক্ষুব্ধ সহপাঠী ও স্থানীয়রা।
বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী একা দেবী বলেন, “আমাদের বাবা-মা ভয় পাচ্ছেন বিদ্যালয় ও প্রাইভেটে পাঠাতে।”
বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী নুসরাত জাহান বলেন, “সে অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী ছিলো। আমরা রাজনার হত্যার বিচার চাই। আমাদের সঙ্গেও এরকম ঘটনা ঘটতে পারে। রাজনার ঘটনার পরে আমরা রাস্তাঘাটে বের হতে ভয় পাচ্ছি।”
বিদ্যালয়ের দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী শাহরিয়ার সানজিব পিয়াস বলেন, “আমাদের কলেজের ছোট বোন সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী রাজনাকে নির্মমভাবে হত্যা করে বস্তাবন্দি করে ফেলে দেয়া হয়েছে। এই হত্যাকাণ্ডের ৩ দিন পার হয়ে গিয়েছে, এখনও কাউকে গ্রেপ্তার করা হয় নি। এর জবাব প্রশাসনের কাছে আমরা চাই। আগামী ২৪ ঘন্টার মধ্যে খুনীদের গ্রেফতার করা না হলে আমরা আন্দোলনে নামবো।”
মানববন্ধনে সুরমা উচ্চ বিদ্যালয় এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ আমিনুল ইসলাম বলেন, “আগামী তিন দিনের মধ্যে আমাদের শিক্ষার্থী রাজনা আক্তারের হত্যাকারীদের গ্রেফতার ও আইনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে।”
শান্তিগঞ্জ উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান প্রভাষক নুর হোসেন বলেন, “আমাদের এই এলাকায় এ ধরনের ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটেনি। যারা এই ঘটনা ঘটিয়েছে তাদের আইনের আওতায় নিয়ে এসে বিচার দাবি জানাই।”
মাননীয় পরিকল্পনামন্ত্রী এই হত্যাকাণ্ডে দুঃখ প্রকাশ ও পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন। দ্রুত অপরাধীদের সনাক্ত করে আইনের আওতায় নিয়ে আসার জন্য তিনি ডিআইজি মহোদয়ের সঙ্গে আলাপ করবেন বলে জানান।
শান্তিগঞ্জ উপজেলা নিবার্হী অফিসার মো: আনোয়ার উজ জামান বলেন, “একজন শিক্ষার্থীকে হত্যা করা হয়েছে। বিষয়টি কষ্টদায়ক। প্রকৃত দোষীদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে পুলিশ চেষ্টা করছে। এজন্য সময় লাগছে। তবে দ্রুত সময়ের মধ্যে দোষীদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে।”
এছাড়াও মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান দুলনা রাণী, বিদ্যালয়ের সভাপতি আব্দুল মুমিন, স্থানীয় ইউপি সদস্য রাজ্জাক মিয়া প্রমুখ।
Leave a Reply